Friday, November 4, 2016

জাকির নায়েকের হিন্দুধর্ম নিয়ে মিথ্যাচারের জবাব।

 

অনেকদিন পর কিছু প্রশ্ন পেলাম মুসলিম ভাইদের থেকে। এরসাথে অনেক আজিরা কাহিনী ও লিখে দিয়েছিলো যার কোনও প্রমান বা ভিত্তি নেই। তো নিচের গুলোর তারা রেফারেন্স দিয়েছে তাই উত্তর দিলাম। নিচের প্রশ্ন গুলা তারা আমার পোস্টে কমেন্ট করে।
প্রশ্ন ১। কৃষ্ণ তার সুদর্শন চক্রের দ্বারা উভয় লিঙ্গ কেটে দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে পার্বতীর প্রান রক্ষা করে। আর এই স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য প্রবর্তন হয় এই যুক্তলিঙ্গ পূজা । (ভগবত, নবম স্কন্ধঃ৫৯৮)
উত্তরঃ আমি বুঝি না এরা কি খেয়ে এসব প্রশ্ন করে। এদের কথায় হাসবো না দুঃখ পাবো বুঝি না। কারন ভগবতে, নবম স্কন্ধে ৫৯৮ নং অধ্যায় বলতেই কিছু নেই। মূল সংস্কৃত গ্রন্থে নবম স্কন্ধে মাত্র ২৪টা অধ্যায়। তবে মুসলমান ভাইরা ৫৯৮ নং অধ্যায় কোথাই পেলো?
প্রশ্ন ২। নেশ নিজ মা পার্বতীকে তুলশী ভেবে তার সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়। পরবর্তীতে এই ঘটনা শিব জানতে পেরে অভিশাপ দিয়ে নিজ ছেলে গনেশের মাথা হাতির মাথায় পরিবর্তন করে দেয় । (স্কন্ধ পুরাণ, নাগর খন্ডম ৪৪৪১, পৃঃ১-১৬)
উত্তরঃ এখানেও সেম কাহিনী স্কন্ধ পুরাণে, নাগর খন্ডকে ৪৪৪১টি অধ্যায় নাই, পৃষ্ঠা নং ১-১৬ তো দূরে থাক। মূল সংস্কৃত গ্রন্থে নাগর খন্ডকে মাত্র ২৭৯টা অধ্যায়। হায়রে কি মানুষ এরা।
প্রশ্ন ৩। অতঃপর ব্রহ্মা এবং তার কন্যা স্বরস্বতী স্বামী-স্ত্রীর ন্যায় ১০০ বছর সহবাস করলেন। তারা স্বয়ংভূমারু নামে এক পুত্র এবং শতরূপা নামে এক কন্যার জন্ম দেন। অতঃপর তারাও দুজন দুজনের সাথে সহবাস করে এবং তাদের মিলনের ফলে ব্রহ্মা দুজন দৌহিত্র ও দুজন দৌহিত্রা লাভ করেন। (মৎস্য পুরাণ ৩ঃ৩২; ভগবত পুরাণ্ ৩ঃ১২-২৮)
উত্তরঃ মৎস্য পুরাণ ৩:৩২ ও ভগবত পুরাণ ৩:১২-২৮ দুটো রেফারেন্স চরম মিথ্যাচারের প্রমান। সহবাসের কোনও কথাই নেই সেখানে। এরা যে কি খেয়ে প্রশ্ন করতে আসে বুঝি না।
প্রশ্ন ৪। সীতার গর্ভে রাবনের দুজন জমজ সন্তানের জন্ম হয় যাদের নাম হলঃ ‘লব’ আর ‘কুশ’। [রামায়ন ২:১৯-২১]
উত্তরঃ এইসব মন্তব্য চুড়ান্ত মিথ্যা ছাড়া আর কিছুই না। “লব” আর “কুশ” অবশ্যই শ্রী রামের পুত্র, লঙ্কা থেকে মাতা সীতা কে উদ্ধার করার পর শ্রী রাম পুস্পক বায়ুযানে চড়ে অযোধ্যা আসেন এবং মাতা সীতার সাথে পুনরাই একসাথে বসবাস করেন। মাতা সীতা রাবন কে নিজের দেহ দান করেছিলো এটা রামায়ণ কি কোনো পুরাণে উল্লেখ নাই, উল্টে রামায়ণের লঙ্কাকাণ্ডে উল্লেখ আছে রাবন মাতা সীতা কে শত প্রলোভন শত প্রস্তাব শত মিথ্যা শত ভয় দেখিয়েও মাতা সীতাকে তার সঙ্গে বিবাহের জন্য রাজি করাতে পারেন নি। মাতা সীতা মরণের জন্য প্রস্তুত ছিলো কিন্তু বিবাহের জন্য নয়।
হ্যাঁ, এবার যদি মুসলমানরা নতুন কোনো রামায়ণ আবিস্কার করে তবে তা আলাদা ব্যাপার। আর মুসলমানদের প্রমান কতটা মিথ্যা তার প্রমান দেখুন রামায়নের ২য় কাণ্ড ১৯-২১ অধ্যায় রেফেরেন্স দেখে।
রামায়ণের ২নং কাণ্ডের নাম অযোধ্যা কাণ্ড যখন মাতা সীতা রাবণ দ্বারা অপহরণ হয়নি তখন রাবণের সাথে সীতা মাতার সম্পর্ক তৈরী হল চিন্তা করুন এটা কতটা মিথ্যাকর মন্তব্য। রামায়ণের ৩নং কাণ্ড মানে অরণ্য কাণ্ডের শেষের দিকে মাতা সীতাকে রাবণ অপহরণ করে। বাকি থাকে অযোধ্যা কাণ্ডের ১৯ থেকে ২১নং অধ্যায়। তবে এই অধ্যায় গুলোর সারবস্তু শুনুন- ১৯নং অধ্যায় – শ্রী রাম কে বনবাসে পাঠাবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। ২০নং অধ্যায় – রানী কৌশল্যা রামের বনবাস সিদ্ধান্তে শোক প্রকাশ করলেন। ২১নং অধ্যায় – শ্রী রামের বনবাস সিদ্ধান্তে লক্ষণ রাগান্বিত হলেন এবং শ্রী রাম তাকে সান্তনা দেন।
প্রশ্ন ৫। তের মাস যাবৎ তার এই পন্থাতেই ঘরে আগত (যৌনতৃপ্তি লাভের নিমিত্তে) যেকোনো ব্রাহ্মণকে সম্মান দেখানো উচিত আর এতে সম্ভ্রান্ত নারী এমনকি বেশ্যাদের জন্যও কোন পাপ নেই।'' (সূত্রঃ মৎস্য পুরাণ ৭০:৪০-৬০, মহাভারত ৩:২:২৩)
উত্তরঃ মহাভারত ৩.২.২৩, “Alas, how shall I take shelter of one more merciful than He who granted the position of mother to the she-demon Putana although she was unfaithful and she prepared deadly poison to be sucked from her breast” এখানে কোথায় যৌনের শিক্ষা পেলেন বলেন ? আর মৎস্য পুরাণ ৭০:৪০ থেকে ৬০ পৃষ্ঠাতেও তেমন কোনও কথা নেই।
প্রশ্ন ৬। শ্রীকৃষ্ণ ১৩০০০ মতান্তরে ১৬০০০ টা বিয়ে করছিলো!
উত্তরঃ ১৩০০০ বা ১৬০০০ না সঠিক হলও ১৬১০০ টা। হ্যা কথাটা মহাভারতে এসেছে। শ্রীকৃষ্ণ ১৬১০০ নারীকে নরকাসুর নামক অসুরের কারাগার থেকে উদ্ধার করে তাদের সম্মান রক্ষার্থে তাদের বিবাহ করেন। মহাভারতে এটাও এসেছে যে, শ্রীকৃষ্ণ নরকাসুরকে বধ করে সমস্ত বন্দী নারীদের মুক্ত করেন। তৎকালীন সামাজিক রীতি অনুসারে বন্দী নারীদের সমাজে কোন সম্মান ছিল না এবং তাদের বিবাহের কোন উপায় ছিল না কারণ তারা ইতিপূর্বে নরকাসুরের অধীনে ছিল। কৃষ্ণের সমস্ত মহিষীগণই ছিলেন সেই সব নারী যারা বহু জন্মের তপস্যা করে কৃষ্ণের স্ত্রী হওয়ার অধিকার লাভ করেছিলেন। তো এখানে স্পষ্ট বলা, যে নারীদের শ্রীকৃষ্ণ বিয়ে করেছিলেন তাদের সম্মান রক্ষার্থে এবং তাদের পূর্ব জনমের তপস্যার কারনে তারা শ্রীকৃষ্ণকে বিয়ে করতে পেরেছিলো। কাওকে শখে বিয়ে করেনি শ্রীকৃষ্ণ। যদি মহাভারতের ১৬১০০টা সে বিয়ে করেছিলো মানেন। তাহলে এটাও মানতে হবে যে সেই নারী গুলোর আগের জনমের তাদের তপস্যার কারনে তারা শ্রীকৃষ্ণকে বিয়ে করতে পেরেছে এবং শ্রীকৃষ্ণ তাদের সমাজে সম্মান রক্ষ্যাথে এই বিয়েটি করেছিলেন কেও আনন্দে বা শখে করেনি। যদি তার ১৬১০০ টা বিয়ে মানেন তাহলে এটাও মানবেন। আর যদি আমার কথা না মানেন তাহলে তার ১৬১০০ টা বিয়ে মানাও ছেড়ে দিন। কারন ১ লাইন মানবেন ১ লাইন মানবেন না এমনতো হবে না ভাই। আসা করি উত্তর গুলো পেয়েছেন ।
sothikdhormo.blogspot.com

No comments:

Post a Comment

যে কোনও প্রশ্ন করতে পারেন আমাদের কাছে