Tuesday, September 27, 2016

বেদ বানী (সনাতন ধর্ম প্রচার) sothikdhormo.blogspot.com

##১. সদা সর্বত্র বিরাজমান, তন্দ্রাহীন সদা সজাগ, প্রতিনিয়ত করুণাবর্ষণকারী সর্বশক্তিমান হে প্রভু, আমরা শুধু তোমরাই মহিমা স্মরণ করি, তোমরাই জয়গান গাই। প্রভু হে আমাদের সর্বোত্তম আত্মিক পথে, আলোকিত পথে পরিচালনা কর, আমরা যেন সবসময় সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকে অনুধাবন করতে পারি। ঋগ্বেদ, ৩/৬২/১০ ২. সত্য জ্ঞানী তিনিই, যিনি জানেন প্রভু এক এবং অদ্বিতীয়। তিনি সর্বশক্তিমান এবং সর্ববিষয়ে একক ক্ষমতার অধিকারী প্রাণ এবং নিষ্প্রাণের সবকিছুই তাঁর নখদর্পণে। সকল ক্ষমতার কেন্দ্র তিনি একক ও অনন্য। অথর্ববেদ, ১৩/৫/১৪-২১ ৩. স্বর্গীয় জ্যোতি ও আনন্দ উপলব্ধির প্রতীক ‘ওঁ’ স্থাপিত হোক তোমার হৃদয়ে অনন্তকালের জন্য। যজুর্বেদ, ২/১৩ ৪. মহাপ্রভুর দৃষ্টিতে কেউই বড় নয়, কেউই ছোট নয় সবাই সমান, প্রভুর আশীর্বাদ সবারই জন্য। ঋগ্বেদ, ৫/৬০/৫ ৫. হে নেতা, হে পুরোধা ঈশ্বরের গুণাবলীতে গুণান্বীত হও। যজুর্বেদ, ১/১৮ ৬. অলস মস্তিষ্ক কুচিন্তার সহজ শিকার। ঋগ্বেদ, ১০/২২/৮ ৭. মন চলে যায় আকাশে-পাতালে; পাহাড়ে-সাগরে, মনকে নিয়ে আস নিজেরই অন্তরে যেন তা থাকে তোমারই নিয়ন্ত্রণে। ঋগ্বেদ, ১০/৫৮/২ ৮. হে নেতা হে পুরোধা পাহাড়ের মত দৃঢ় ও অজেয় হও। কর্তব্য পালনে সবসময় অবিচল থাক। যজুর্বেদ, ১২/১৭ ৯. যারা সৎ পথে কঠোর পরিশ্রম করে এবং পরস্পরকে সহযোগিতা করে তাদেরকে প্রভু সাহায্য করেন। ঋগ্বেদ, ৪/২৩/৭ ১০. সৎকর্ম মানুষকে দৃঢ় ও সাহসী করে। দেহ মনকে রোগ ও পাপ থেকে মুক্ত রাখে। সকল প্রতিকূলতার উপর বিজয়ী করে। ঋগ্বেদ, ৫/১৫/৩ ১১. হে মানুষ স্বনির্ভর হও বাইরের সাহায্যে দাসে পরিণত হইও না। যজুর্বেদ, ৬/১২ ১২. হে প্রভু আমাদের সর্বোত্তম সম্পদ দান কর, দান কর কালজয়ী মন, আত্মিক সুষমা, অনন্ত যৌবন, আলোকজ্জ্বল রূপ আর মধুর বচন। ঋগ্বেদ, ২/২১/৬ ১৩. হে মানুষ উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে আন্তরিকতার সাথে পরিশ্রম কর, দারিদ্র্য-অসুস্থতা তোমার কাছ থেকে পালিয়ে যাবে। অথর্ববেদ, ৬/৮১/১ ১৪. কখনও জুয়া খেলবে না, পরিশ্রমলব্ধ সম্পদ ভোগ কর ও পরিতৃপ্ত থাক, পরিশ্রমলব্ধ সম্পদই সত্যিকারের সুখ দিতে পারে। ঋগ্বেদ, ১০/৩৪/১৩ ১৫. জীবনের প্রতিটি স্তরে সবধরনের ঋণ থেকে মুক্ত থাকো। অথর্ববেদ, ৬/১১৭/৩ ১৬. স্বনির্মিত সহস্রশৃঙ্খলে মানুষই নিজেকে বন্দী করে রেখেছে। ঋগ্বেদ, ৫/২/৭ ১৭. হে মানুষ উঠো, দাঁড়াও। পতিত হওয়া তোমার স্বভাবজাত নয়। জ্ঞানের আলোকবর্তিকা শুধুমাত্র তোমাকেই দেওয়া হয়েছে। যা দিয়ে তুমি সকল অন্ধকূপ এড়িয়ে যেতে পার। অথর্ববেদ, ৮/১/৬ ১৮. কর্কশ স্বরে কথা বল না, তিক্ত কথা যেন মুখ ফসকে বেরিয়ে না যায়। যজুর্বেদ, ৫/৮ ১৯. হে প্রভু সামর্থ্য দাও উদ্দীপনাময় সুন্দর ও সাবলীল কথা বলার। ঋগ্বেদ, ১০/৯৮/৩ ২০. সত্যিকারের ধার্মিক সবসময় মিষ্টভাষী ও অন্যের প্রতি সমমর্মী। সামবেদ, ২/৫১ ২১. সমাজকে ভালবাস, ক্ষুধার্তকে অন্ন দাও, দুর্গতকে সাহায্য কর, সত্য-ন্যায়ের সংগ্রামে সাহসী ভূমিকা রাখার শক্তি অর্জন কর। ঋগ্বেদ,৬/৭৫/৯ ২২. নি:স্বার্থ দানের জন্য রয়েছে চমৎকার পুরস্কার। তারা লাভ করে আশীর্বাদধন্য দীর্ঘজীবন ও অমরত্ব । ঋগ্বেদ, ১/১২৫/৬ ২৩. জীবনের প্রতিটি স্তরে অনিয়ন্ত্রিত রাগ-ক্রোধ থেকে দূরে থেকো। সামবেদ, ৩০/৭ ২৪. একজন নিরীহ মানুষের ক্ষতি যে করে সে মানুষ নয়, সে হায়না। তার কাছ থেকে দূরে থেকো। ঋগ্বেদ, ২/২৩/৭ ২৫. ঈর্ষা থেকে হৃদয়কে মুক্ত কর, সহিংসতা থেকে বিরত থাকো। সামবেদ, ২৭/৪ ২৬. যে ক্ষুধার্ত সঙ্গীকে অভুক্ত রেখে একাই ভুরীভোজ করে এবং যে স্বার্থপর তার সাথে কখনও বন্ধুত্ব কর না। ঋগ্বেদ, ১০/১১৭/৪ ২৭. বিশ্বজনীন মমতার স্বাদ যে পেয়েছে সে সকল প্রাণীর মাঝেই নিজের অস্তিত্ব খুঁজে পায়। যে নিজেকে পরমাত্মার অংশ মনে করে সে কখনও অন্যের দিকে অবজ্ঞাভরে তাকায় না। সে কখনও কাউকে ঘৃণা করে না, তাই ঘৃণা, দুঃখ, বেদনাও তাকে স্পর্শ করতে পারে না। যজুর্বেদ, ৪০/৬ ২৮. হে মানব জাতি, তোমরা সম্মিলিতভাবে মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত হও, পারস্পারিক মমতা ও শুভেচ্ছা নিয়ে একত্রে পরিশ্রম কর, জীবনের আনন্দে সম অংশীদার হও। অথর্ববেদ, ৩/৩০/৭ ২৯. ভ্রাতৃসঙ্গে সকল মানুষ সমান, কেউ ছোট নয় কেউ বড় নয়। যজুর্বেদ, ১৬/১৫ ৩০. হে মানুষ সুষম জীবনাচর অনুসরণ কর, ধরিত্রী থেকে আহরিত খাবার ও পানীয় সমভাবে বণ্টন কর। একটি চাকার শিকগুলো সমভাবে কেন্দ্রে মিলিত হলে যেমন গতিরসঞ্চার হয়, তেমনি সাম্য-মৈত্রীর ভিত্তিতে ঐকবদ্ধ হও, তাহলেই অগ্রগতি অবধারিত। অথর্ববেদ, ৩/৩০/৬ ৩১. হে পূজ্য বিদ্বান ও সজ্জন বৃন্দ, আমরা কর্ণদ্বারা কল্যাণময়ী বাণী শ্রবণ করব। চক্ষুদ্বারা কল্যাণময় দৃশ্য দর্শন করব। অচঞ্চল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা পরমাত্মার পূজা করব। বিদ্বানেরা যেরূপ আয়ুকে লাভ করেন আমরাও তার অনুরূপ আয়ু প্রাপ্ত হব। যজুর্বেদ, ২৫/২১ ৩২. হে পরমাত্মন। তুমি তেজস্বী, আমাতে তেজ স্থাপন কর। তুমি বীর্য্যবান, আমাতে বীর্য্য স্থাপন কর। তুমি বলবান, আমাতে বল স্থাপন কর। তুমি ওজস্বী, আমাতে ওজঃ স্থাপন কর। তুমি অধর্মের দন্ডদাতা, আমাতে অধর্ম দমনের শক্তি স্থাপন কর। তুমি সহনশীল, আমাতে সহনশক্তি স্থাপন কর। যজুর্বেদ, ১৯/৯ ৩৩. যিনি সকলের সুখদাতা, সর্বোৎকৃষ্ট ন্যায়াধীশ, ঐশ্বর্য্যদাতা, মহাশক্তিশালী ও মহাপরাক্রান্ত, তিনি আমাদের জন্য সুখ ও শান্তি দান করুন। ঋগ্বেদ, ১/৯০/৯ ৩৪. হে মানব! তোমরা একসঙ্গে চল, একসঙ্গে মিলে আলোচনা কর, তোমাদের মন উত্তম সংস্কারযুক্ত হোক। পূর্বকালীন জ্ঞানী পুরুষেরা যেরূপ কর্তব্য সম্পাদন করেছেন তোমরাও সেই রূপ কর। ঋগ্বেদ ১০/১৯১/২ ৩৫. তোমাদের সকলের মত এক হোক, মিলন ভূমি এক হোক, মন এক হোক, সকলের চিত্ত সম্মিলিত হোক, তোমাদের সকলকে একই মন্ত্রে সংযুক্ত করেছি, তোমাদের সকলের অন্ন ও উপভোগ একই প্রকারের দিয়েছি। ঋগ্বেদ ১০/১৯১/৩ ৩৬. তোমাদের সকলের লক্ষ্য সমান হোক, তোমাদের হৃদয় সমান হোক, তোমাদের মন সমান হোক। এই ভাবে তোমাদের সকলের শক্তি বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হোক। ঋগ্বেদ, ১০/১৯১/৪ ৩৭. আমি তোমাদের জন্য সহৃদয়তা, উত্তম মন, নির্বৈরতা প্রদান করেছি। গাভী যেমন নবজাত বৎসের মলিন শরীরকে সর্বশ্রেষ্ঠ অঙ্গ জিহ্বা দ্বারা পরিষ্কার করে তোমরা একে অন্যের প্রতি সেইরূপ প্রেম কর। অথর্ববেদ ৩/৩০/১ ৩৮. তোমরা জ্যেষ্ঠের সম্মান করিও। তোমরা বিচারশীল সাধক একই বন্ধনের নীচে আবদ্ধ হয়ে চলছ। তোমরা পৃথক হইও না। একে অন্যের সঙ্গে মনোহর কথাবার্তায় অগ্রসর হও। তোমাদেরকে এক পথের পথিক এবং উত্তম মন বিশিষ্ট করেছি। অথর্ববেদ, ৩/৩০/৫ ৩৯. তোমাদের পান একসঙ্গে, ভোজনও একসঙ্গে হোক। তোমাদেরকে এক সঙ্গে একই প্রেমবন্ধনে যুক্ত করেছি। সকলে মিলে পরমাত্মাকে পূজা কর। রথের চাকার চারিদিকে যেমন অর থাকে তোমরা সেই ভাবে থাক। অথর্ববেদ, ৩/৩০/৬ ৪০. হে মানব, ঈশ্বরের মহিমাকে বৃদ্ধি কর, ভ্রান্ত আচরণশীল অনার্যকে সমুচিত শিক্ষা দাও। বিশ্বের সকলকে আর্য কর। ঋগ্বেদ, ৯/৬৩/৫ ৪১. যিনি এক ও অদ্বিতীয়, যিনি মনুষ্যদের সর্বদ্রষ্টা, যিনি সর্বশক্তিমান ও পালক একমাত্র তাঁকেই উপাসনা কর। ঋগ্বেদ, ৬/৪৫/১৬ ৪২. (পরমেশ্বর সকল মানুষের প্রতি উপদেশ দিচ্ছেন) ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, শূদ্র, বৈশ্য, স্বীয় স্ত্রী ও সেবকাদি এবং অন্যান্য সকল মানুষকেই যেমন আমি এই মঙ্গলদায়িনী বেদবাণীর উপদেশ দান করিয়াছি, তোমরাও সেইরূপ কর। যেমন বেদবাণীর উপদেশ করে আমি বিদ্বানদের প্রিয় হয়েছি, তোমরাও সেরূপ হও। দানের জন্য আমি এই সংসারে দানশীল পুরুষদের যেমন প্রিয় হয়েছি, তোমরাও সেরূপ হও। যজুর্বেদ, ২৬/২ ৪৩. ওঠো! জাগো! সত্যের পতাকা সমুন্নত রাখো। দৃপ্ত পদক্ষেপে এগিয়ে যাও অন্যায় ও অসত্যের বিনাশে। ঋগ্বেদ, ১০/১০৩/১৩ ৪৪. তোমরাও সেরূপ হও। আমার ইচ্ছা বেদবিদ্যার প্রচার বৃদ্ধি হোক। আমার মধ্যে যেমন সর্ব্ববিদ্যাহেতু সুখ রয়েছে, তোমরাও সেরূপ বিদ্যা গ্রহণ ও প্রচার দ্বারা মোক্ষ সুখ লাভ কর। যজুবের্দ ২৬/২ ৪৫. হে পোষক বীর, কর্ম ও বুদ্ধিকে লাভ কর। দেশোন্নতি করতে সমর্থ হও। রাজকোষ পূর্ণ কর। অভাবগ্রস্তকে ধনদান কর। অস্ত্রকে তীক্ষ্ম কর এবং প্রজাদের উদর পূরণের ব্যবস্থা কর। ঋগ্বেদ, ১/৪২/৯

No comments:

Post a Comment

যে কোনও প্রশ্ন করতে পারেন আমাদের কাছে